Amphan - Anupam Mitra

আম্ফান




বেশ ছিলাম গৃহবন্দী হয়ে করোনা আবহে, পূর্বাভাস এলো ঝড় আসছে বাংলায়। নিউজ চ্যানেল সোশাল মিডিয়াতে ও উঠল ঘূর্ণিঝড়, কোথা দিয়ে বাংলায় ঢুকবে, কত গতিবেগ, কোনদিকে যাবে। সেদিন সকাল থেকেই মুষলধারে বৃষ্টি আর ঝোড়ো হাওয়ায় আবহাত্তয়া ও বেশ ঠান্ডা ঠান্ডা কুল কুল। এর মধ্যেই CESC থেকে এক পরিচিতের ফোন পাম্প চালিয়ে জল ভরে রাখিস, Power cut হবে। তৎক্ষণাৎ আরো কিছু আত্মীয় ও বন্ধুবান্ধবকে জানিয়ে দেওয়া আর মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষা।

ঘড়ির কাঁটা এগোনোর সঙ্গে সঙ্গে ঘরের বন্ধ জানালায় টের পেলাম তার পদধ্বনি। দরজা খুলে নিরাপদ দুরত্বে দাড়িয়ে দেখলাম তার তান্ডব। এর মধ্যেই লোডশেডিং। উৎকন্ঠায় ফোন দু একজন আত্মীয় বন্ধুকে কিন্তু বিধি বাম। ততক্ষণে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন, দিন শেষ হয়ে রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আম্ফানের তান্ডব। আর কতক্ষন ভগবান। একে করোনায় রক্ষে নেই আম্ফান দোসর। আলো আসার অপেক্ষা আর উৎকণ্ঠা। কলকাতায় যদি এইরকম তান্ডব হয় তো সাগরপারের প্রত্যন্ত গ্রামের কি পরিণতি। পরের দিন টিভিতে ধ্বংসের খন্ডচিত্র। উফফ্। কত মানুষ বিপদের মধ্যে। জল আর মানুষের সহাবস্থান।

এমতাবস্থায় ভাবছিলাম কিভাবে এদের পাশে দাঁড়ানো যায়। ত্রানকার্য্যে যুক্ত কিছু বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে কথা ও হল। হঠাৎই একদিন নামসা মুক্ত মঞ্চে কেউ একজন প্রস্তাব দিলেন আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষদের জন্য যদি কিছু করা যায়। এর কিছুদিন পরেই সম্পাদক মহাশয়ের বিজ্ঞপ্তি এবং সদস্যদের এগিয়ে আসার আহ্বান। যাক আমার প্রিয় নামসা ও মহৎ উদ্যোগে মানুষের পাশে সামিল।

৫ - ৬ই জুলাই ২০২০ নির্দিষ্ট হল নামসার ত্রাণ অভিযান। কিঞ্চিৎ সংশয়ের সঙ্গেই মুক্তমঞ্চে ত্রানকার্য্যে স্বেচ্ছাসেবক হওয়ার আমার ইচ্ছাপ্রকাশ। ফোন করে ফেললাম সুমিতদাকে যদিও কোনো পূর্বপরিচয় ছিল না। তবে হ্যাঁ ২০২০ নামসার পূনর্মিলন অনুষ্ঠানে সম্পাদক মহাশয়কে একঝলক দেখেছিলাম Throw & Hit wicket খেলার সময়। একটিপে wicket ভেঙে দিলেন দুবার। কথা হল বেশ কিছুক্ষণ। ইসলামিয়া মাঠ, মল্লিক কলোনী, ত্রাণ বিতরণের পরিকল্পনা আরো বেশ কিছু এবং ধৈর্য্য ধরতে বললেন ৩—৪ দিন। ঠিক ৪ দিন পরে জানালেন আমি যাচ্ছি। ফোন করে জানালাম সুবীর আর সন্দীপনকে। দুজনেই ভীষন খুশি ১৯৯০ থেকে নামসার এই কর্মকাণ্ডে কেউ তো যাচ্ছে। বুঝলাম আমার সাথে মানসিকভাবে ওরাও যাচ্ছে গঙ্গাসাগরের আম্ফান বিদ্ধস্থ প্রত্যন্ত বেগুয়াখালি গ্রামের মানুষের পাশে।

এবারের ব্যাগ গোছানো একটু অন্যরকম। মাস্ক, স্যানিটাইজার, গ্লাভস, টুপি আর বাকি গতানুগতিক। রবিবার সকালে ৬-৩০ নাগাদ সুমিতদার বাড়ি পৌছে গেলাম। দীপুদা, অরুনাংশুদা, দীপঙ্করদা আর সৌপ্তিককে পেয়ে গেলাম যাত্রাসঙ্গী। ১৯৬৮ থেকে ২০১৬। দূর্দান্ত range, নামসাতেই সম্ভব। সঞ্জয়দা আসতেই সপ্তরথীর যাত্রা শুরু। ষ্টিয়ারিংয়ে সুমিতদা পরবর্তী গন্তব্য লট নং ৮ ফেরিঘাট। রাস্তায় প্রাতরাশ সেরে নির্ধারিত সময়ে পৌছে গেলাম মূড়িগঙ্গার পারে। মেঘলা আবহে লঞ্চে যেতে যেতে চলল ফটোশেষন নিজস্বী। সৌজন্য সঞ্জয়দা। দীপুদা খুলে দিলেন অভিজ্ঞতার ভান্ডার। ওটা ঘোড়ামারা দ্বীপ, ওদিকে হলদিয়া, ঐদিক দিয়ে গেলে সুন্দরবন।

পৌছালাম ভারত সেবাশ্রম সংঘ, গঙ্গাসাগর। আলাপ হল নিমাই মহারাজের সঙ্গে। ঘরে ঢুকে মলাটটা বদলে সাঙ্গ হল মধ্যাহ্নভোজ। মহারাজ ঘুরিয়ে দেখালেন ভারত সেবাশ্রম সংঘ, ব্যক্ত করলেন সংঘের ব্যপ্তি, গঙ্গাসাগর মেলার ব্যবস্থাপনা, প্রাক করোনা পরিস্থিতি, আম্ফান পরবর্তী কার্যকলাপ। ছকে দিলেন আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ। বিকেল বেলায় কপিল মুনির মন্দির দর্শন। দীপুদার মস্তিষ্কপ্রসুত ম্যাপে সমুদ্রতটে ফুটে উঠল আমাদের ভৌগোলিক অবস্থান। একপ্রস্থ ফটোসেশন চা পানের সময় সুমিতদার সারমেয় প্রীতি ধরা পড়ল। সংঘে ফিরে দেখলাম ত্রাণসামগ্রী হাজির। সব ঠিকমত মিলিয়ে নেওয়া পরের দিনের জন্য গুছিয়ে রেখেই ছুট মন্দিরে। ততক্ষনে গুরুপূর্ণিমার যজ্ঞ শুরু করে দিয়েছেন মহারাজ। যজ্ঞের লেলিহান শিখা জানান দিচ্ছে মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা, অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।। পরের দিন অর্থাৎ ৬ই জুলাই ২০২০ ভোরবেলায় সমুদ্রস্নান আর বাবার আশীর্বাদ সঙ্গে নিয়ে আমাদের যাত্রা শুরু। সব তীর্থ বারবার গঙ্গাসাগর একবার।।

বেগুয়াখালী — ভারত সেবাশ্রম সংঘের সহযোগিতায় নামসা আয়োজিত সাগর দ্বীপের আমফান ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের ত্রাণে খাদ্যসামগ্রী বন্টন কর্মসূচী। দুর্গত মানুষদের হাতে খাদ্যসামগ্রী তুলে দেওয়া। এ পাওয়ার অভিব্যক্তি অবর্ণনীয়। এই সীমিত সাহায্য হয়তো অপ্রতুল কিন্তু মানুষের পাশে বিপদের দিনে দাড়িয়ে বোঝানো আমরা তাদেরই একজন। আর্থসামাজিক ভেদাভেদের ঊর্ধ্বে উঠে নামসার খাদ্যসামগ্রী বন্টন কর্মসূচীর অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য বোধহয় এটাই। সদাহাস্যমুখ, আন্তরিক নিমাই মহারাজ পুরো অনুষ্ঠান পরিচালনা করলেন একজন নিখুঁত ব্যান্ডমাষ্টারের দক্ষতায়, স্বকীয়তায়। ওনার আতিথেয়তায় আমরা মন্ত্রমুগ্ধ। বলতে দ্বিধা নেই ওনাদের সহযোগীতা ছাড়া এই কর্মসূচি অসম্ভব ছিল। ধন্যবাদ জানাই নামসা সভাপতি, সম্পাদক, নামসা পিতা মহোদয়দের যারা সামনে দাঁড়িয়ে এই ত্রাণকার্য্যের বাস্তবায়ন করেছেন। অকুন্ঠ ধন্যবাদ নামসার সদস্যবৃ্ন্দদের যাদের ঐকান্তিক সাহায্য ব্যতীত এই কর্মসূচীর বাস্তবায়ন দূরূহ ছিল। আশা রাখি সভাপতি, নামসা পিতা ও সমসাময়িক অগ্রজদের মগজাস্ত্র আর তরুন তুর্কি সম্পাদকের দৃঢ় প্রচেষ্টায় নামসা ভবিষ্যতে এইরকম আরো সমাজসেবামূলক প্রকল্প উপস্থাপনা করবে।

জয় নামসা।।

অনুপম মিত্র (১৯৯০ মাধ্যমিক)

Amphan Relief Programme (Phase I) Photos







Comments

অসাধারন লেখা। সুন্দর শব্দচয়ন।। চলচ্চিত্রের মতো চোখের সামনে পুরোটা ভেসে উঠলো।। নামসা পরিবারের সবাই কে ধন‍্যবাদ এতো সুন্দর একটা কাজ সুসম্পন্ন করার জন‍্য। বিশেষ করে বিশ্ব দা'কে ধন‍্যবাদ।। যত ই উনি বাসু দা, রঞ্জন দা'র ঠ‍্যাং ধরে টানুন ত্রানবিলি করার প্রস্তাব উনি ই প্রথম দিয়েছিলেন।। জয় নামসার জয়।।
Unknown said…
ধন্যবাদ অনুপম। তুমি যে ভাবে বর্ণনা করেছো তা এক কথায় অসাধারণ।

সুমিত রায়
১৯৮৫
The GLI also undertake auditing, area inspections and safety audits, and so they work with gaming regulators, suppliers, and operators, with an purpose of guaranteeing the integrity of the gaming industry. Blackjack is usually 리턴벳 generally known as|often identified as} the on line casino sport with one of the best odds so that you can} win. You can learn how to to|learn to} play blackjack and get prime secret blackjack suggestions from our consultants on our Blackjack website. Whether you play on an iPhone or Android, cellular playing apps provide prime graphics, easy software program and better of all, have the ability to|you possibly can} play everywhere.